প্রকাশিত: Tue, Dec 27, 2022 4:10 PM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 2:05 PM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্মোচিত হলো যোগাযোগের নতুন দিগন্ত

মেট্রো রেলের যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ

সালেহ্ বিপ্লব: আজ প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করতে যাচ্ছে আধুনিকতার নতুন এক অধ্যায়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে যুক্ত হতে যাচ্ছে বিদ্যুৎচালিত দ্রুতগতির মেট্রোরেল। শেখ হাসিনা প্রথম যাত্রী হয়ে মেট্রোরেলের এমআরটি-৬ লাইনের দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন করবেন। জনসাধারণের জন্য এই রেল চালু হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁওয়ের ভাড়া ৬০ টাকা, কিলোমিটার প্রতি ভাড়া ৫ টাকা।

১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথের আধুনিক ট্রেনে সবগুলো কোচই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। শুরুর দিকে পুরাপুরি অপারেশনে যাচ্ছে না মহানগরীর নতুন এ গণপরিবহন। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে, আপাতত সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা চালানো হবে। 

মেট্রোরেলের উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে মোট ৯টি স্টেশন। এগুলো হলো- উত্তরা উত্তর (দিয়াবাড়ী), উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও। তবে শুরুতে কোনও স্টেশনে দাঁড়াবে না মেট্রো। দিয়াবাড়ী থেকে শুরু করে আগারগাঁওয়ে শেষ করবে। প্রতি ১০ মিনিট পর পর উভয়প্রান্ত থেকে চলাচল করবে। 

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ২৯ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা চালানো হবে। পুরোদমে চালুর ব্যাপারে আমাদের প্রত্যাশা হলো তিন মাস পরে, সেটি ২৬ মার্চও হতে পারে। আমরা ওইদিন থেকে পূর্ণ অপারেশনে যাব। এই সময়ের মধ্যে মানুষ মেট্রোরেলের চড়ায় অভ্যস্ত হয়ে যাবে এটা আমাদের বিশ্বাস। 

এমআরটি-৬ লাইনের জন্য ২৪ সেট ট্রেন কেনা হচ্ছে জাপান থেকে। এরই মধ্যে ১৯টি ট্রেন এসেছে। ১৯ ধরনের পরীক্ষা চলছে সেগুলোর। পারফরম্যান্স টেস্ট, ট্রায়াল রান ও ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট শেষ হওয়া ১০টি ট্রেন চলবে দিয়াবাড়ী-আগারগাঁও অংশে। আর দুটি রিজার্ভ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে শুরুতে পাঁচটি ট্রেন চলবে। 

মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ২ হাজার ৩০৮ জন হলেও শুরুর দিকে প্রতিটি ট্রেন ১০০ থেকে ৩৫০ যাত্রী নিয়ে চলবে। মেট্রোরেলের ছয় বগির ট্রেনের দুই দিকেই থাকবে ট্রেইলার কোচ। মেট্রোরেলে প্রতিটি ট্রেনে একটি করে বগি নারী যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তবে নারী যাত্রীরা সাধারণ বগিতেও ভ্রমণ করতে পারবেন।

যাত্রীদের যাতায়াত সম্পর্কে দিকনির্দেশনা পরে ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। 

সাধারণ রেলপথে পাথর থাকে। কিন্তু মেট্রোরেলের লাইনে কোনো পাথর নেই। সাধারণ রেললাইনে কিছুটা পরপর জোড়া আছে। কিন্তু মেট্রোরেলের লাইনে কোনো জোড়া নেই। আসা-যাওয়ার দুটি ভিন্ন লাইন।

শুধু স্টেশনে একাধিক লাইন আছে। মেট্রোরেল চলাচল করবে পুরোপুরি বিদ্যুতের মাধ্যমে। এ জন্য রেললাইনের দুই পাশে খুঁটি দিয়ে ওপরে তার টানানো হয়েছে। মেট্রোরেলের সঙ্গে ওপরের তারের সংযোগ আছে।

সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেলের লাইন নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। সেসব লাইনে মেট্রোরেলের স্থাপনা ও যাত্রীদের নিরাপত্তায় বিশেষ পুলিশ (এমআরটি পুলিশ) নিয়োগের আইন করা হয়েছে। আপাতত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে ঢাকা মহানগর পুলিশ। মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে দুই দিকে থাকছে দুটি করে চারটি ফটক, এর প্রতিটিতে দুজন করে মোট আটজন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের তদারকী করবেন একজন কর্মকর্তা। 

এম এ এন সিদ্দিক আরও বলেন, মেট্রোরেলের ভাড়া পরিশোধের জন্য ১০ বছর মেয়াদি স্থায়ী কার্ড থাকবে। এই কার্ড কিনতে লাগবে ২০০ টাকা। এরপর প্রয়োজনমতো টাকা দিয়ে (রিচার্জ) কার্ড ব্যবহার করা যাবে। এই কার্ড পেতে নিবন্ধন করতে হবে।

বৃহস্পতিবারই ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের লিংক দেওয়া হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তবে এক যাত্রার (সিঙ্গেল জার্নি) জন্য নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না। স্টেশন থেকে এক যাত্রার এবং দীর্ঘমেয়াদি দুই ধরনের কার্ড পাওয়া যাবে।

এমআরটি-৬ প্রকল্প সরকারের অনুমোদন পায় ২০১২ সালে। ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। পরে তা ধাপে ধাপে বেড়ে হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এরমধ্যে জাইকা ঋণ দিচ্ছে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। সবশেষ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে। সম্পাদনা: খালিদ আহমেদ